জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনার্সে আইসিটি: কারা পড়াবেন, যোগ্যতা ও নিয়ম

1 12

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য আবশ্যিক আইসিটি কোর্সটি মূলত আইসিটি, কম্পিউটার সায়েন্স বা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ের শিক্ষকেরা পড়াবেন। যদি এসব বিষয়ের শিক্ষক না পাওয়া যায়, তবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক, বা পদার্থবিজ্ঞান, গণিত, রসায়নের মতো বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষকেরা এই দায়িত্ব পাবেন। প্রয়োজনে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় খণ্ডকালীন শিক্ষকও নিয়োগ করা যাবে।

বর্তমান যুগ তথ্যের এবং প্রযুক্তির। এই বাস্তবতাকে সামনে রেখে দেশের বৃহত্তম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় (National University) একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে অনার্স প্রথম বর্ষের সব বিষয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আইসিটি (ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি) বিষয়টিকে আবশ্যিক করা হয়েছে। এই কোর্সের অন্তর্ভুক্ত আছে একটি তাত্ত্বিক এবং একটি ব্যবহারিক অংশ।

শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি দারুণ খবর হলেও, অনেকের মনেই প্রশ্ন উঠেছে, এত বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ কোর্সটি কারা পড়াবেন? এই প্রশ্নটির উত্তর দিয়েছে স্বয়ং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, একটি প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে। চলুন, জেনে নিই এই নির্দেশনায় শিক্ষকদের যোগ্যতা ও নিয়োগের নিয়ম সম্পর্কে কী বলা হয়েছে।

অনার্স প্রথম বর্ষে আইসিটি কোর্স: কেন আবশ্যিক?

ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রযুক্তির জ্ঞান অপরিহার্য। প্রতিটি পেশায় এখন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। তাই শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে এই উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে। আইসিটি কোর্সটি তাদের ডিজিটাল দক্ষতা বাড়াতে এবং প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হতে সাহায্য করবে। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন রিসার্চ, ডেটা অ্যানালাইসিস এবং ডিজিটাল কমিউনিকেশনের মতো দক্ষতা অর্জনের সুযোগ করে দেবে, যা তাদের ক্যারিয়ারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আইসিটি কোর্স পাঠদানে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের যোগ্যতার ভিত্তিতে একটি অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি করেছে। এই তালিকাটি নিচে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:

১. প্রথম অগ্রাধিকার: আইসিটি ও কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষক

যেকোনো কলেজের আইসিটি বিষয়ের শিক্ষক, কম্পিউটার সায়েন্স বা কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ের শিক্ষকেরা এই কোর্সটি পড়ানোর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবেন। এটি স্বাভাবিক, কারণ এই বিষয়গুলোর শিক্ষকেরাই আইসিটির তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি পারদর্শী।

২. দ্বিতীয় অগ্রাধিকার: প্রশিক্ষিত ও পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমাধারী শিক্ষকেরা

যেসব শিক্ষকের সরাসরি আইসিটি বা কম্পিউটার সায়েন্সের ডিগ্রি নেই, তারাও এই কোর্সটি পড়ানোর সুযোগ পাবেন যদি তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ থাকে। অগ্রাধিকারের এই তালিকায় থাকবেন সেই শিক্ষকেরা, যারা:

  • আইসিটি বিষয়ে টিওটি (Training of Trainers), সিইডিপি, এনএসডিএ, বিটিইবি বা বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের মতো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন।
  • বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) স্বীকৃত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইসিটিতে পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা (Postgraduate Diploma in ICT) অর্জন করেছেন।

৩. তৃতীয় অগ্রাধিকার: অন্যান্য বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষকেরা

যেসব কলেজে উপরে উল্লিখিত কোনো বিষয়ের শিক্ষক পাওয়া যাবে না, সেখানে কিছু বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষক এই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পদার্থবিজ্ঞান, গণিত, রসায়ন, পরিসংখ্যান, প্রাণিবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা, মৃত্তিকাবিজ্ঞান, প্রাণরসায়ন, ভূগোল ও পরিবেশ এবং পরিবেশবিজ্ঞানের মতো বিষয়ের শিক্ষকেরা এই কোর্সটি পড়াতে পারবেন।

৪. বিশেষ ক্ষেত্রে খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ

যদি কোনো কলেজ উপরের তিনটি অগ্রাধিকার তালিকা থেকে কোনো শিক্ষক খুঁজে না পায়, তাহলে তাদের জন্য একটি বিকল্প ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অথবা বেসরকারি কলেজের গভর্নিং বডি বিশেষ পরিস্থিতিতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় যোগ্য খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ করতে পারবেন। এই ধরনের শিক্ষকের যোগ্যতা হতে পারে:

  • জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত কম্পিউটার প্রোগ্রামার বা সহকারী প্রোগ্রামার
  • আইসিটি বিষয়ে পারদর্শী কোনো রিসোর্সপারসন

শিক্ষকদের জন্য সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নতুন সিদ্ধান্তটি শিক্ষকদের জন্য নতুন সুযোগ এবং একই সাথে চ্যালেঞ্জও তৈরি করেছে।

  • সুযোগ: আইসিটিতে প্রশিক্ষিত শিক্ষকদের জন্য এটি একটি দারুণ সুযোগ। এর মাধ্যমে তারা তাদের দক্ষতা কাজে লাগাতে পারবেন এবং পেশাগতভাবে আরও এগিয়ে যেতে পারবেন।
  • চ্যালেঞ্জ: যে সব শিক্ষকের আইসিটি বিষয়ে সরাসরি দক্ষতা নেই, তাদের জন্য এই কোর্স পড়ানো একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে। তবে এর মাধ্যমে তারা নতুন কিছু শেখার এবং শিক্ষার্থীদের সাথে প্রযুক্তির জ্ঞান ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ পাবেন।

এই পদক্ষেপটি শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়নের (professional training) গুরুত্ব বাড়িয়ে দেবে এবং ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থার প্রসারে সহায়তা করবে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স প্রোগ্রামে আইসিটি কোর্সটি অন্তর্ভুক্ত করা নিঃসন্দেহে একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। এটি শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল যুগে নিজেদের প্রস্তুত করতে সহায়তা করবে। একই সাথে, শিক্ষকদের জন্যেও এটি নিজেদের জ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধ করার একটি সুযোগ। এই নির্দেশনাটি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তার শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আরও পড়ুনখাদ্য অধিদপ্তর নিয়োগ পরীক্ষা: অফিস সহকারী পদের পরীক্ষার তারিখ ও প্রবেশপত্র

Leave A Reply

Your email address will not be published.