৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারিতে কম উত্তীর্ণের কারণ: পিএসসির কৌশল ও দীর্ঘসূত্রতা কমানোর উদ্যোগ
৪৭তম বিসিএস ফলাফল বিশ্লেষণ: কেন মাত্র ১০ হাজার ৬৪৪ জন উত্তীর্ণ হলেন? পিএসসির নতুন কৌশল
৪৭তম বিসিএস ফলাফল: সদ্য প্রকাশিত ৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, মাত্র ১০ হাজার ৬৪৪ জন পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন। যেখানে ক্যাডার পদসংখ্যা প্রায় ৩ হাজার ৪০০টি, সেখানে অতীতে পদের তুলনায় সাত-আট গুণ বেশি প্রার্থীকে উত্তীর্ণ করা হলেও এবার মাত্র তিন গুণের কিছু বেশি প্রার্থীকে উত্তীর্ণ করা হয়েছে। এই কম সংখ্যক উত্তীর্ণের বিষয়টি অনেক ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার্থী-কে অবাক করেছে।
পিএসসির এই কৌশলগত পরিবর্তনের পেছনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ থাকতে পারে, যার মূল লক্ষ্য হলো বিসিএস নিয়োগ প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা কমানো এবং প্রক্রিয়াটিকে আরও কার্যকর করা।
৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ফলাফল: কম উত্তীর্ণের পেছনে পিএসসির কৌশল
পিএসসির এই সিদ্ধান্তের পেছনে চারটি প্রধান কৌশলগত কারণ রয়েছে, যা পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা যায়:
১. পরীক্ষার দীর্ঘসূত্রতা ও সময়ক্ষেপণ কমানো
বিসিএস নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রধান সমালোচনা হলো এর দীর্ঘসূত্রতা। বিগত ৪১তম বিসিএস সম্পন্ন করতে পাঁচ বছরের বেশি সময় লেগেছে। প্রিলিমিনারিতে কম পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হলে পুরো প্রক্রিয়াটি দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব।
- লিখিত পরীক্ষার গতি বৃদ্ধি: উত্তীর্ণের সংখ্যা কম হলে লিখিত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন দ্রুততর হবে। ৪৫তম বিসিএসে ১২ হাজার ৭৮৯ জন পরীক্ষার্থীর খাতা মূল্যায়নে সোয়া এক বছরের বেশি সময় লেগেছিল।
- মৌখিক পরীক্ষা দ্রুত সম্পন্নকরণ: লিখিত পরীক্ষার পর মৌখিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যাও কমবে। ফলে মৌখিক সাক্ষাৎকার গ্রহণ ও চূড়ান্ত ফলাফল তৈরি দ্রুততম সময়ে হবে।
২. নন-ক্যাডার আন্দোলনের চাপ সামলানো
গত কয়েকটি বিসিএস ফলাফলের পর নন-ক্যাডারে নিয়োগ নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ক্যাডার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত না হওয়া প্রার্থীরা প্রায়ই ভাইভা পাস করা সব পরীক্ষার্থীকে নন-ক্যাডার পদে সুপারিশ করার দাবি জানান।
- বাস্তবতা হলো, নন-ক্যাডার পদের সংখ্যা এত বেশি নয় যে সবাইকে সুপারিশ করা সম্ভব।
- অপেক্ষাকৃত কম পরীক্ষার্থীকে প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ করা পিএসসির জন্য সুবিধাজনক। কারণ, এতে নন-ক্যাডারের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার প্রত্যাশী প্রার্থীর সংখ্যা যৌক্তিকভাবে কম থাকে, ফলে অসন্তোষ বা আন্দোলনের চাপও হ্রাস পায়।
৩. খাতা মূল্যায়নে গুণগত মান বৃদ্ধি
লিখিত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে পিএসসি একটি ইতিবাচক কৌশল গ্রহণ করেছে, যা উত্তীর্ণের সংখ্যা কম হলে আরও কার্যকর হবে।
- সার্কুলার সিস্টেম: পরীক্ষকদের পিএসসিতে ডেকে নিয়ে এসে প্রতি পরীক্ষককে দিয়ে একটি মাত্র প্রশ্নের মূল্যায়ন করানো হচ্ছে।
- এই সিস্টেমে খাতার সংখ্যা যত কম হবে, প্রত্যেক শিক্ষক একটি মাত্র প্রশ্নের উত্তর মূল্যায়ন করলে তাঁদের মধ্যে নম্বরের বিচ্যুতি দূর হবে এবং খাতা মূল্যায়নের মান ততই ভালো হবে।
৪. শূন্যপদ পূরণের চ্যালেঞ্জের সমাধান
দীর্ঘদিনের জনবলসংকট দূর করতে পিএসসি এবার এক বছরের রোডম্যাপ নিয়ে কাজ করছে। চূড়ান্ত যোগদানে পাঁচ বছর অতিবাহিত হলে মন্ত্রণালয় ও মাঠপর্যায়ে যে দীর্ঘমেয়াদী জনবলসংকট সৃষ্টি হয়, তা শূন্যপদ থাকার চেয়েও বড় সমস্যা।
- রোডম্যাপ বাস্তবায়িত হলে এক বিসিএসে কোনো ক্যাডারে নিয়োগ আশানুরূপ না হলেও, সেই সংকট কাটাতে সর্বোচ্চ পরবর্তী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে পরের বিসিএসের মাধ্যমে দ্রুত সমাধান করা সম্ভব।
পিএসসি ইতিমধ্যেই তার রোডম্যাপ বাস্তবায়নে ইতিবাচক সূচনা করেছে। ৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারির ফলাফল মাত্র ৯ দিনের মধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে, এবং লিখিত পরীক্ষাও দুই মাস পরই শুরু করার কথা রয়েছে। পিএসসির এই পরিবর্তনশীল কৌশল বিসিএস প্রক্রিয়াকে দ্রুত ও কার্যকর করবে।