সরকারি ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ: বিনামূল্যে কোর্স, প্রতিদিন ২০০ টাকা ভাতা এবং আবেদন প্রক্রিয়া

Rockery Freelancing Training: Free Course, Daily Allowance of 200 Taka and Application Process

1 6

সরকারি ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ: বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব একটি বড় সমস্যা। প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী স্নাতক ডিগ্রি নিয়েও নিজেদের পছন্দের চাকরি খুঁজে পান না। এমন পরিস্থিতিতে, নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে স্বাবলম্বী হওয়ার একটি দুর্দান্ত উপায় হতে পারে ফ্রিল্যান্সিং। আর এই ফ্রিল্যান্সিংকে দেশের প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে দিতে বাংলাদেশ সরকার নিয়ে এসেছে এক অসাধারণ উদ্যোগ—যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে বিনামূল্যে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ।

এই নিবন্ধে, আমরা শুধু প্রকল্পের খবর নয়, বরং এর পেছনের উদ্দেশ্য, এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব এবং কিভাবে এটি তরুণদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্যারিয়ার টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে, তা নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করব।

প্রকল্পের সারসংক্ষেপ: ‘৪৮টি জেলায় যুবদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ’

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এবং দেশের তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ৪৮টি জেলায় যুবদের বিনামূল্যে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ প্রদান। এই প্রকল্পটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে প্রযুক্তিগত দক্ষতার পাশাপাশি মার্কেটপ্লেসে কাজ করার বাস্তব অভিজ্ঞতাও দেওয়া যায়।

প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের যুব সমাজকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা দিয়ে সজ্জিত করা। এর মাধ্যমে তারা দেশের বাইরে থেকে রেমিট্যান্স আনতে পারবে এবং একইসাথে নিজেদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে।

বাস্তবায়নকারী সংস্থা: যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ও ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং

এই প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর এবং আইসিটি ডিভিশনের আওতাভুক্ত ‘ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এই সমন্বিত উদ্যোগ নিশ্চিত করে যে প্রশিক্ষণটি মানসম্মত এবং কার্যকর হবে।

প্রশিক্ষণের বিস্তারিত: সময়কাল, বিষয়বস্তু ও সুযোগ-সুবিধা

এই প্রশিক্ষণটি কোনো সাধারণ অনলাইন কোর্স নয়। এটি একটি সুবিন্যস্ত এবং সুপরিকল্পিত দীর্ঘমেয়াদী প্রোগ্রাম যা শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ প্রস্তুত করে তোলে।

কোর্সের মেয়াদ ও সময়কাল (১ অক্টোবর – ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫)

প্রশিক্ষণটি ১ অক্টোবর ২০২৫ থেকে শুরু হবে এবং ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত চলবে। এই তিন মাসের দীর্ঘ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শেখার সুযোগ দেবে।

প্রতিদিনের ক্লাস ও মোট সময় (৮ ঘণ্টা, মোট ৬০০ ঘণ্টা)

প্রতিদিন ৮ ঘণ্টার নিবিড় প্রশিক্ষণ চলবে। এতে মোট ৬০০ ঘণ্টার একটি ব্যাপক কোর্স কারিকুলাম রয়েছে। এতে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ডেটা এন্ট্রি সহ বিভিন্ন জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং দক্ষতার ওপর জোর দেওয়া হবে।

আর্থিক সহায়তা ও অন্যান্য সুবিধা (দৈনিক ২০০ টাকা ভাতা, খাবার)

এই প্রকল্পের একটি বড় আকর্ষণ হলো এর আর্থিক সহায়তা। প্রশিক্ষণ চলাকালীন প্রতিটি প্রশিক্ষণার্থী প্রতিদিন ২০০ টাকা করে ভাতা পাবেন। এর পাশাপাশি দুপুরের খাবারও বিনামূল্যে প্রদান করা হবে। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় অনুপ্রেরণা কারণ এতে তারা প্রশিক্ষণকালে নিজেদের ব্যক্তিগত খরচগুলো মেটাতে পারবে।

ইনসাইডার’স ইনসাইট: প্রশিক্ষণার্থীদের অভিজ্ঞতা

“আমি সরকারি ফ্রিল্যান্সিং প্রকল্পের তৃতীয় ব্যাচের একজন প্রশিক্ষণার্থী ছিলাম। এই প্রশিক্ষণটি আমার ক্যারিয়ারে একটি গেম-চেঞ্জার ছিল। এটি শুধু প্রযুক্তিগত দক্ষতা দেয়নি, বরং মার্কেটপ্লেসে কাজ পাওয়ার বাস্তব কৌশল এবং ক্লায়েন্ট ম্যানেজমেন্টও শিখিয়েছে।”

আবেদন করার যোগ্যতা ও নিয়মাবলী

এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে হলে কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা পূরণ করতে হবে।

শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বয়সসীমা

আবেদনকারীকে কমপক্ষে এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। বয়সসীমা ১৮ থেকে ৩৫ বছর।

যে ৪৮টি জেলার প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন (বিভাগ অনুযায়ী তালিকা)

এই প্রশিক্ষণটি দেশের ৪৮টি জেলার যুবকদের জন্য উন্মুক্ত। নিচে বিভাগ অনুযায়ী জেলাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো:

  • ঢাকা বিভাগ: ঢাকা, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী।
  • চট্টগ্রাম বিভাগ: চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লা।
  • রাজশাহী বিভাগ: রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, জয়পুরহাট, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ।
  • খুলনা বিভাগ: খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, মাগুরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা।
  • সিলেট বিভাগ: সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ।
  • বরিশাল বিভাগ: বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি।
  • ময়মনসিংহ বিভাগ: ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোনা।
  • রংপুর বিভাগ: রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও দিনাজপুর।

আবেদন প্রক্রিয়া: ধাপে ধাপে নির্দেশিকা

আবেদন প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ। নিচে ধাপে ধাপে আবেদন করার পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো।

আবেদনের লিংক ও শেষ তারিখ (২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫)

আবেদন করার শেষ তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫। আগ্রহী প্রার্থীদের https://online.dyd.gov.bd/ এই লিংকে গিয়ে আবেদন করতে হবে।

অনলাইন ফরম পূরণ ও আবেদন কপি ডাউনলোড

প্রথমে ওয়েবসাইটে গিয়ে সকল ব্যক্তিগত ও শিক্ষাগত তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ করতে হবে। ফরমটি সঠিকভাবে পূরণ করার পর একটি আবেদন কপি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে রাখতে হবে।

প্রবেশপত্র ডাউনলোড ও পরীক্ষার নির্দেশনা

আবেদন শেষ হওয়ার পর একটি প্রবেশপত্র ডাউনলোড করতে হবে। এতে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার তারিখ ও স্থান সম্পর্কিত সকল তথ্য থাকবে।

প্রশিক্ষণার্থী বাছাই ও দক্ষতা যাচাই

প্রকল্পে আবেদনকারীদের মধ্য থেকে যোগ্য প্রার্থীদের বাছাই করা হবে।

ভর্তি কমিটি ও বাছাই প্রক্রিয়া (লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা)

একটি ভর্তি কমিটি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করবে।

কাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে? (আইসিটি ও ইংরেজি দক্ষতা)

যাদের কম্পিউটার ও ইংরেজিতে দক্ষতা রয়েছে, তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

প্রকল্প পরিচালকের বক্তব্য: “কেবল আবেদন করলেই হবে না, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য বেসিক কম্পিউটার জ্ঞান ও ইংরেজিতে প্রস্তুতি থাকা আবশ্যক। যারা এই দুই বিষয়ে ভালো, তাদের সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।”

গুরুত্বপূর্ণ তারিখ ও সময়সূচী (পরীক্ষা ও ফলাফল)

আবেদনকারীকে এই তারিখগুলো মনে রাখতে হবে:

  • লিখিত পরীক্ষার তারিখ: ২৬ সেপ্টেম্বর
  • লিখিত পরীক্ষার ফলাফল: ২৭ সেপ্টেম্বর
  • মৌখিক পরীক্ষার তারিখ: ২৮ সেপ্টেম্বর
  • চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর

বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সিং অর্থনীতি

সরকারের আইসিটি ডিভিশন থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান তৈরি করেছে। সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে।

প্রকল্পের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব: ফ্রিল্যান্সিং অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান

এই প্রকল্পটি কেবল কিছু মানুষকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর রয়েছে সুদূরপ্রসারী প্রভাব।

দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে এই প্রকল্পের ভূমিকা

এটি দেশের একটি বিশাল জনগোষ্ঠীকে ডিজিটাল অর্থনীতির জন্য দক্ষ করে তুলবে। এতে তারা দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও নিজেদের দক্ষতা কাজে লাগাতে পারবে।

বেকারত্ব হ্রাসে এর সম্ভাবনা

প্রকল্পটি সফল হলে এটি দেশের বেকারত্ব হ্রাসে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।

সরকারি ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ প্রকল্প তরুণদের জন্য একটি সোনালি সুযোগ। এই সুযোগ ব্যবহার করে তারা নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও অবদান রাখতে পারে। তাই, সময় থাকতে আবেদন করে নিজেকে প্রস্তুত করে তুলুন।

আরও পড়ুনপড়াশোনার সেরা সময় কোনটি? বিজ্ঞান ও কার্যকর কৌশলের চূড়ান্ত নির্দেশিকা

1 Comment
  1. […] আরও পড়ুন: সরকারি ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ: বিনা… […]

Leave A Reply

Your email address will not be published.